Thursday, December 15, 2011

মহান বিজয় দিবস : এক গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।


আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। এ দেশের ইতিহাসে এক গৌরব ও অহঙ্কারের দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। এ বছর আমরা দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপন করছি। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ’৭১-এর এ দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। সেদিন জাতি নির্ভয়ে গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের অবিনাশী গান। আমি আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছি পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া শহীদদের।
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস শুধু একাত্তরেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে স্ফুরিত জাতীয় চেতনার পথ ধরে ধারাবাহিক সংগ্রামে ১৯৬৯ সালে ঘটে গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকার আদায়ের গণঅভ্যুত্থান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলে তত্কালীন পাকিস্তানে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু সেই নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিকে রক্তস্রোতে ভাসিয়ে দিতে চায়, শুরু করে গণহত্যা। সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ ধরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি |
স্বাধীনতাত্তোর ৪০ বছরে নানা বিষয়ে আমাদের সাফল্য এবং ব্যর্থতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি এবং অগ্রগতি হয়েছে।কিন্তু এসব উন্নতি এবং অগ্রগতির অন্তরালে একটি নির্মম সত্য আছে—যে আশা নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সেই আশা এখনও পূরণ হয়নি। মানুষের মৌলিক অধিকার অর্থাত্ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মানবাধিকার নিশ্চিত হয়নি। একটি সুস্থ, সবল ও গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে উঠেনি। গত ৪০ বছরে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে।একত্রিতভাবে ’৭১-এ যুদ্ধে পুরো দেশ ঐক্যবদ্ধ ছিল। কিন্তু তারপর গত ৪০ বছরে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা হলো বিদ্বেষ, বিভক্তি ও দলাদলির ঘটনা। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশীরা। জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে আসছে অঢেল বৈদেশিক মুদ্রা। এ কৃতিত্ব প্রবাসী শ্রমজীবীদের। কিন্তু দেশের দলাদলি,কোন্দল বিদেশেও বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিভেদ সৃষ্টি করায় দেখা দিয়েছে ইমেজ সঙ্কট। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা এগোচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে রাষ্ট্র এবং সমাজকে গণতান্ত্রিক করা। এর জন্য দরকার ছিল মৌলিক সামাজিক রূপান্তর—কিন্তু সেই সামাজিক বিপ্লব ঘটেনি। ফলে নানা ক্ষেত্রে যে উন্নতি ঘটেছে তার মাধ্যমে নানাভাবে সামাজিক বৈষম্য আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। 
অন্যদিকে এ বছর এমন একটি সময় আমরা বিজয়ের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি যখন দেশি-বিদেশি চিহ্নিত অপশক্তির গভীর ষড়যন্ত্রে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। সীমান্তে প্রতিদিনই চলছে গুলি। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিরীহ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখছে কাঁটাতারের বেড়ায়। রাষ্ট্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির মাধ্যমে দেশের জাতীয় সম্পদ তুলে দেয়া হচ্ছে বিদেশিদের হাতে। ট্রানজিট দেয়ার নামে বিপন্ন করা হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এ দেশের মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন টিপাইমুখ বাঁধ বিষয়ে সরকারের মন্ত্রীরা ভারত সরকারের সুরে কথা বলছেন। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে দেশের আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হিসেবে। সত্য বলার অপরাধে টুটি চেপে ধরা হচ্ছে গণমাধ্যমের। শেয়ারবাজারকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়ে হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দিশেহারা।নিরন্তর পরিশ্রম করেও মানুষ দু’বেলা আহার জোগাড় করতে পারছে না। সারাদেশে চলছে লাগামহীন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে খুন এবং গুমের ঘটনা। সবমিলিয়ে এ রাষ্ট্রে সবচেয়ে সস্তা এখন মানুষের জীবন। তবুও প্রতিবছর বিজয় দিবস আমাদের জীবনে আসে নতুন প্রেরণা নিয়ে।সেই প্রেরণার আন্দোলিত আহবানে নতুন স্বপ্নে বিভোর প্রত্যাশিত বাংলাদেশের এই প্রজন্মকে জানাই বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা |

Thursday, December 1, 2011


"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাইনা আর, অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দোয়েল পাখি-চারদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙ্গা থেকে না জানি কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ" |
              ---(বাংলার মুখ) জীবনানন্দ দাশ |