Sunday, February 12, 2017

উমরা কীভাবে করবেনঃ (كيف تعتمر)


হজ্জ বা উমরার ইবাদাতে প্রবেশের নিয়ত করাই হচ্ছে ইহরাম। সে হিসেবে প্রথমে ইহরামের কাপড় পরবে, অতঃপর নিয়ত করবে। উমরা হলে উমরার নিয়ত, আর হজ্জ করলে হজ্জের নিয়ত।
পুরুষের ইহরামের কাপড়টি চাদরের মতো দু’টুকরো কাপড়ের ১ টি নিচে ও অপরটি গায়ে পরিধান করবে। সাদা রঙ উত্তম।
উমরার কাজ ৪ টি, এগুলো হলোঃ (১) ইহরাম বাঁধা (২) বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করা (৩) সাঈ’ করা (৪) মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটা।
হজ্জ ও উমরা পালনকারীদের জন্য মক্কার চারপাশে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কয়েকটি সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হজ্জ ও উমরার জন্য যেসব জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, এ জায়গাগুলোকে বলা হয় ‘মীকাত’।
বাংলদেশ থেকে বিমানে করে যারা জেদ্দায় যান তারা যে মীকাত অতিক্রম করেন তা হলো ‘কারনুল মানাযিল’। উক্ত ‘কারনুল মানাযিল’ অতিক্রম করার আগেই ইহরামের কাপড় পরে উমরার নিয়ত করে ফেলবেন। নিয়ত মনে মনে করবেন, আর মুখেও উচ্চারণ করবেন, اللهم لبيك عمرة،  
(বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরা)   কাপড় পরিধান ও নিয়ত – এ দু’টো কাজ সমাপ্ত করলে ইহরাম করা হয়ে যায়।
এবার তালবিয়্যাহ পড়তে থাকুন। তালবিয়্যাহ হলোঃ
 لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، أن الحمد والنعمة لك والملك، لا شريك لك،
মসজিদে হারামে ঢুকার পরপরই তালবিয়্যাহ পড়া বন্ধ করুন।
মসজিদে হারামে প্রবেশকালে ডান পা আগে দিয়ে পড়ুনঃ
أعوذ باالله العظيم وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله اللهم افتح لي أبواب رحمتك،
আর হারাম শরীফ থেকে বের হওয়ার সময় পড়বেনঃ
بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم إني اسألك من فضلك،
মসজিদে হারামে প্রবেশের পর তাওয়াফের শুরুতেই পুরুষেরা ইদ্তিবা করবেন। ইহরামের গায়ের কাপড়টি এক মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে এমনভাবে পেচিয়ে দেবেন, যাতে ডান কাঁধ, বাহু ও হাত খোলা থাকে। কাপড়টির বাকি অংশ ও উভয় মাথা দিয়ে বাম কাঁধ ও বাহু ঢেকে ফেলবেন। এটাকেই বলা হয় ইদ্তিবা। তাওয়াফের সময় ছাড়া আর কখনো ইদ্তিবা নেই। অন্য সময় বরং দু’কাঁধ ঢেকে রাখা সুন্নাত। তাছাড়া নামাযের সময় দু’কাঁধ ঢেকে রাখা অত্যাবশ্যক।
কাবাঘরকে বামপাশে রেখে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে বা চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করবেন এবং এখানে এসেই শেষ করবেন। কেউ ভিড়ের কারণে হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করতে না পারলে হাত দ্বারা ইশারা করবে। উক্ত কালো পাথরের কোণা বরাবর মসজিদে হারামের দেয়ালে বৈদ্যুতিক সবুজ বাতি দেওয়া আছে। এ সীমানা বরাবর থেকে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করে তাকবীর বলে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করে তাওয়াফ শুরু করে আবার এখানে ফিরে এলে এক চক্কর শেষ হয়। এভাবে ৭ চক্কর পূর্ণ করতে হয়। আর তাওয়াফের ৭ চক্করের মধ্যে প্রথম ৩ চক্করে কাঁধ হেলিয়ে সজোরে বীর দর্পে ঘন ঘন পা ফেলে একটু দ্রুতগতিতে প্রদক্ষিণ করতে হয়। এটাকে শরীয়াতের পরিভাষায় ‘রমল’ বলে। বাকি ৪ চক্কর সাধারণভাবে হাঁটবেন।
দোয়াঃ
اللهم إيمانا بك، وتصديقا بكتابك، ووفاء بعهدك، وأتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله عليه وسلم،
হাজারে আসওয়াদের কোণা থেকে তাওয়াফ শুরু করলে কাবা ঘরের চতুর্থ কোণটি হবে ‘রুকনে ইয়ামানী’। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রতি চক্করেই এটা স্পর্শ করতেন। রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী জায়গায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিচের এ দোয়াটি পড়তেনঃ
ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنه وقنا عذاب النار،
তাওয়াফের সময় সবচেয়ে বড় ইবাদাত হলো দোয়া করা। কুরআন তিলাওয়াত করা, যিকর-আযকার ও তাওবা-ইস্তিগফার করাও সুন্নাত।
তাওয়াফ শেষ হলে দু’কাঁধ ও বাহু ইহরামের কাপড় দিয়ে আবার ঢেকে ফেলুন এবং মাকামে ইবরাহীম’র কাছে গিয়ে পড়ুনঃ
واتخذوا من مقام إبراهيم مصلي،   (سورة البقرة: ١٤٥)
অতঃপর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। এখানে মানুষের ভিড় থাকলে মসজিদে হারামের যেকোনো জায়গায় নামায পড়া জায়েয আছে। ইমামে আযম আবু হানিফা (রহঃ) ও ইমাম মালেক (রহঃ) এর মতে, এটি ওয়াজিব নামায, আর ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর মতে, তা সুন্নাত। প্রথম রাকাতে সূরা আল-ফাতিহা পড়ার পর সূরা আল-কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল-ফাতিহা পড়ার পর সূরা আল-ইখলাছ পড়া সুন্নাত। উল্লেখ্য যে, তিনটি নিষিদ্ধ ওয়াক্তেও এ দু’রাকাত নামায আদায় করা জায়েয আছে। অতঃপর যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করুন, আর কিছু পানি আপনার মাথায় ঢালুন, যাতে আপনার চেহারার উপর দিয়ে তা গড়িয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ কাজটি করতেন।
এরপর সাফা পাহাড়ে চলে যান সাঈ’ শুরু করার জন্য। কাবা ঘরের পার্শ্বস্থ সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে দৌড়ানোকে সাঈ’ বলে। সাঈ’র প্রথমেই সাফা পাহাড়ে উঠবেন। সেখানে এ আয়াতটি পড়া সুন্নাত,
أن الصفا والمروة من شعائر الله،  (سورة البقره: ١٥٨)
তারপর কিবলামুখী হয়ে সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে নিম্নের এ যিকরটি পাঠ করা সুন্নাতঃ
لا اله الا الله وحده لاشريك له، له الملك وله الحمد يحيى ويمت وهو على كل شيء قدير، لا اله الا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده،
এই যিকরটি পাঠ করার পর দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করবেন।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝের অংশে আনুমানিক ১০০ গজ এলাকা দু’টি সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত করা আছে। এ স্থানকে ‘মায়লাইন আল আখদারাইন’ (দুই সবুজ ফলক) বলা হয়। এ জায়গাটুকুতে ‘রমল’ করা অর্থাৎ হেলে দুলে দৌড়ানো পুরুষের জন্য সুন্নাত। দৌড়ানোর সময় সে অংশে পড়বেনঃ
رب اغفر وارحم انك انت الاعز الأكرم،
সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ে গেলে এক চক্কর হয়, আবার মারওয়া পাহাড় থেকে সাফা পাহাড়ে ফিরে এলে আরেক চক্কর হয়। এভাবে ৭ চক্কর পূর্ণ করবেন।
৭ চক্কর শেষ হলে পুরুষেরা মাথা মুন্ডন করবেন। এখন আপনার উমরা শেষ হয়ে গেল। ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ ছিল সেগুলো এখন হালাল হয়ে গেল। ইহরামের পোশাক বদলিয়ে এবার আপনি যেকোনো কাপড় পরিধান করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment