Sunday, June 25, 2017

“প্রবাসে ঈদ : বিষণ্ন মনের প্রচ্ছন্ন অশ্রু বিসর্জন।”

খানিক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি, ঈদকে নিয়ে কী লিখবো তাই ভেবে! তবুও কিছু একটা লিখতে হবে ভেবেই লিখা। ফেবুতে খুদেবার্তা পেলাম ঈদ নিয়ে লিখার জন্য। যিনি লিখতে বলে মেসেজ করেছেন তার ভালো লাগায় আবদ্ধ আমি এই অযোগ্য মানুষটা। তাই আর অনুরোধ উপেক্ষা করার সাহসে সাহসী হইনি। কিন্তু লিখতে বসে যে শব্দাভাবে ভুগছি তা কী করে এই প্রিয় মানুষটাকে বলি?

খুবই শংকিতভাবেই কী-বোর্ডে হাত চালাতে শুরু করলাম। আর ভাবনার চোখ দিয়ে প্রবাসের ঈদকে হৃদয়ঙ্গম করতে গিয়ে ব্যাথাতুর নেত্রদ্বয় জলভারে ভারী হচ্ছিলো। প্রবাসের অপূর্ণাঙ্গ ঈদের কথা উপস্থাপনে বার বার পিছনে ফিরে যেতে হয়েছে আমার শ্যামলিয়ায়। আমার মাতৃভূমিতে। যেখানে ঈদ আনন্দ উপছে পড়ে খুশির ফোয়ারা হয়ে! প্রবাসে সবই আছে। নেই লাল সবুজের সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলের বাংলাদেশ। ঈদ আছে। নেই ঈদের আনন্দ। এই খন্ড খন্ড হৃদয়ের চাওয়াগুলো প্রবাসের এতো চাকচিক্যের মাঝে মন ভরে না। ফিরে যেতে মন চায় মাটির টানে স্বদেশের আঙিনায়।

একদা আমরা যারা একসাথে চলেছি, একই বিদ্যালয়ে পড়েছি, তারাই আজ ছড়িয়েছি, ছিটিয়েছি পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে; অনেকটা সময়ের প্রয়োজনে। খানিকটা জীবনের দাবীও বটে। জীবনের প্রতি যে দায়বদ্ধতা- তা থেকে একজন দায়িত্ববান মানুষের পালানো সত্যি অসম্ভব, তাই জড়িয়েছি জীবন নামের কাঠিন্যের সাথে।

জীবনের পথ পরিক্রমায় যতটা না দৃষ্টির সীমানা ছেড়ে দূরে গিয়েছি প্রিয় সব মানুষগুলোকে ছেড়ে, প্রিয় জনপদ রেখে, মনে হয় প্রতিদিন সমাধিক কাছে এসেছি আত্মার পথে, ভালোবাসার পথে, ভালোলাগার জন্য। এ এক নিরেট ভালোলাগা, যা সম্পূর্ণ আত্মিক আত্মীয়তায় সমৃদ্ধ।

কখনো কখনো এই প্রবাসকে আনমনে আপন করি, করতে হয়। আপন ভাবি, ভাবতে হয়। আমাদের খুব সুযোগও নেই এই ভাবনা থেকে বের হবার!
বিদেশ বিভূয়ে তাই সর্বদা প্রাণ কেঁদে উঠে আমার রূপসী বাংলার জন্যে, যেথায় আমার জীবন নামক স্রোতস্বিনীর স্বর্ণালী দিনগুলো বর্ণালী হয়েছিল নিজের মতো করে। সেই স্মৃতিমাখা দিনগুলোর কথা ভেবে ভেবেই একটি সুন্দর আর বিলাসী স্বপনের জাল বোনা যায় খুব।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে পালাই আমার শ্যামলিয়ায়, প্রিয় স্বদেশে। কী হবে এই উন্নত জীবনের হাতছানি? কী হবে শতভাগ নাগরিক সুবিধা সমৃদ্ধ জীবন ব্যবস্থা দিয়ে? তাও কি সম্ভব? জীবন যে আমাকে ঘিরে রেখেছে কঠিন এক বাস্তবতায়। এতোসব বাস্তবতায়ও আমাদের এ প্রবাসী জীবনে আনন্দ, হাসি, কান্না, সুখ-দুঃখের সংমিশ্রণতো রয়েছেই।

তবুও আমরা ঈদ উদযাপন করি। পাঞ্জাবী-পায়জামা আর বাহারী সব নুতন জামা পরে ঈদের আনন্দ অন্বেষণে ব্যস্ত হই।

শত অপূর্ণতায়ও প্রবাসী অন্তরাত্মা বলে উঠেঃ

“জীবন যখন বদ্ধখাঁচায় আকাশে ঈদের চাঁদ
কারো কারো ঘরে কান্নার ঢেউ
জীবনের কথা ভুলে গেছে কেউ
দাঁড় টেনে চলো আনতে সুদিন ভাঙ্গো সকল বাঁধ।”

No comments:

Post a Comment